Recents in Beach

নীলকুঠির বউ - একটি বাংলা ভূতের গল্প | হাড় হিম করা ভয়ের গল্প

বাংলার মফস্বল অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে নানা অশুভ স্থান ও ভূতের গল্পের আখ্যান। তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর গল্পগুলোর একটি বয়ে বেড়ায় পুরনো এক নীলকুঠি নিয়ে। আজ আমরা শোনাবো সেই হাড় হিম করা ভয়ের গল্প— এমন একটি বাংলা ভূতের গল্প যা শুনে আপনার রক্ত হিম হয়ে যাবে। এটি শুধু একটি ভূতের গল্পই নয়, এটি একটি মর্মান্তিক প্রেম ও বিশ্বাসঘাতকতার গল্পও বটে।

বাংলা ভূতের গল্প

নীলকুঠির বউ : একটি হাড় হিম করা বাংলা ভূতের গল্প

হাড় হিম করা বাংলা ভূতের গল্প : বর্ষার জন্য সেদিন একটু বিকালেই যেন সন্ধ্যা নেমে এসেছিলো ঝিনাইদহের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। বৃষ্টি ছিল না, কিন্তু ভারী, কালো মেঘে সারা আকাশ ঢেকে ছিলো। বাতাসে ভাসছিলো বৃষ্টি ভেজা মাটির গন্ধ আর দূরে কোনও জলাশয় থেকে ভেসে আসা ব্যাঙের ডাকের আওয়াজ। অর্ণব তাঁর এনফিল্ড বাইকটা চালিয়ে এগচ্ছিলো তার আজকের গন্তব্যের দিকে। কোলকাতা থেকে বাইক চালিয়ে আসতে তার একটু দেরী হয়েই গিয়েছিলো। পেশায় সে ছিলো একজন ফটোগ্রাফার, আর তার শখ ছিল বাংলার কোণে কোণে পৌঁছে পরিত্যক্ত স্থানের ছবি তোলা। তার আজকের টার্গেট ছিল ঝিনাইদহের গ্রামের প্রান্তে থাকা একটি পুরানো ‘নীলকুঠি’।

শ্যামবাবুর নীলকুঠির ইতিহাস

আশেপাশের স্থানীয়রা এই বাড়িটিকে ‘শ্যামবাবুর নীলকুঠি’ বলেই চিনতো। ব্রিটিশ আমলে এটা ছিল এক নীলকর সাহেবের কারখানা ও বাসস্থান। নীলকর সাহেব চলে যাওয়ার সময়, এক জমিদার শ্যামবাবু এটি কিনে নেন। কিন্তু গত পঞ্চাশ বছরের উপর ধরে এটি পরিত্যক্ত। স্থানীয়দের মুখে মুখে ছড়িয়ে ছিলো এক ভূতের গল্প— এই নীলকুঠিতে নাকি দেখা যায় এক সাদা শাড়ি পরা ‘বউ’-এর আত্মাকে।

অর্ণব এসব গল্পকে কুসংস্কার বলেই উড়িয়ে দিতো। তার যুক্তিবাদী মস্তিষ্কে ভূত-প্রেতের কোনও জায়গা ছিলো না। সে নিজের বাইকটা নিয়ে বাড়ির বিশাল, রুস্তম লোহার গেটের সামনে এসে থামালো। গেটের শিকল ভেঙে পড়ে ছিল। বাড়িটা ছিল বিশাল, দু’তলা, ইউরোপীয়ান স্থাপত্যে তৈরী, কিন্তু এখন পুরোপুরিভাবে জঙ্গলে ঢাকা। দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় দেয়ালের সব জায়গায় শ্যাওলা জমেছে, বেশিরভাগ জানালারই কাঁচ ভাঙা।

নীলকুঠিতে প্রবেশ ও অদৃশ্য উপস্থিতির আভাস

ক্যামেরা থেকে লেন্স ক্যাপ খুলে অর্ণব প্রথমেই বাড়িটির সামনের দিকের একটা ছবি তুলে নিলো। তারপর একটা টর্চ জ্বালিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢোকার পথ খুঁজতে লাগলো। ভাঙা ফটক পেরিয়েই ছিল এক বিরাট বাগান, যা এখন এক অতিকায় জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। হঠাৎ তার গায়ে যেন কাঁটা দিয়ে উঠলো। তার এক অদ্ভুত অনুভূতি হতে লাগলো — মনে হচ্ছে যেন কেউ তাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ এবং অনুসরণ করছে।

সে পিছন ফিরে তাকালো, কেউ কোথাও নেই। শুধু একটু দূরেই একটা শেয়ালের সঙ্গে চোখাচোখি হওয়া মাত্রই শেয়ালটা ঝোপের ভেতর অদৃশ্য হয়ে গেল।

“ধুসস, এসব শুধুই আমার মনের ব্যাপার” বলে সে নিজেকে সামলালো।

বাড়ির ভেতরে ঢোকার মূল দরজাটা ছিল কাঠের, অর্ধেক খুলে থাকা অবস্থায়। টর্চের আলো ফেলে ভেতরে ঢুকতেই এক ঝাঁক বাদুড় ভেসে বেরিয়ে অর্ণবের মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেলো। অর্ণব একটু থতমত খেয়ে গেলো। বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়লো বিশাল একটা হলঘর। মাঝখানে ঝুলছে একটা মোমবাতির স্ট্যান্ড, চারপাশে ধুলো আর মাকড়সার জালে ঢাকা আসবাবপত্র।

অর্ণব ক্যামেরা তাক করে ছবি তুলতে শুরু করে দিলো। ক্যামেরার ফ্ল্যাশের ঝলকানির আলোয় পুরনো ঘরটা আরও ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছিলো। হঠাৎ তার কানে যেন ভেসে এলো একটা আওয়াজ—মৃদু একটা নিঃশ্বাসের শব্দ, খুব কাছ থেকে। অর্ণব তড়াক করে পিছন ফিরে তাকালো। টর্চের আলো ঘুরিয়ে সবদিক খুঁজে দেখলো। নাহ, কেউ কোথাও নেই।

“হয়তো হাওয়া হবে,” সে নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করলো।

দ্বিতীয় তলার রহস্য

সে এবারে সিঁড়ি বেয়ে ওপরের তলায় উঠতে লাগলো। সিড়িগুলো ভাঙা, বিপজ্জনক। কিন্তু তাও অর্ণব উপরে উঠলো। ওপরের করিডোরটা ছিল নিঝুম, তার নিজের পায়ের ফেলার শব্দও যেন গমগম করে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিলো। সে একটা একটা করে ঘর দেখতে লাগলো। একটা ঘরে সে একটা পুরনো খাট দেখতে পেল, তাতে এখনও মশারি ঝুলছে। মনে হচ্ছিল যেন কেউ সদ্য এখানে শুয়ে ছিল।

সেই ঘরটা থেকে বেরিয়ে অন্য ঘরে যাওয়ার সময় হঠাৎ তার চোখ পড়লো করিডোরের অন্যপ্রান্তে দাঁড়ানো এক সাদা মূর্তির ওপর। হৃদয়টা এক সেকেন্ডের জন্য যেন ধুকপুক করা বন্ধ করে থেমে গেল অর্ণবের। টর্চের আলোটা সোজা সেদিকে ফেলতেই দেখা গেলো, সেটা একটা মানবাকৃতির মূর্তি - একটা পুরনো সাদা মার্বেলের মূর্তি।

সে হাফ ছেড়ে বাঁচল। “উফফ, ভগবান! মারাত্মক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।” সে নিজেকে বললো।

কিন্তু তখনই ঘটলো এক অন্যরকম ঘটনা। করিডোরের শেষ প্রান্তে, একটা ঘর থেকে ভেসে আসতে লাগলো মৃদু একটা গানের সুর…

কথাগুলো স্পষ্ট নয়, কিন্তু গানটা ছিল করুণ, মর্মস্পর্শী, কিন্তু সেই পরিবেশে তা শুনতে ছিল অত্যন্ত ভয়ঙ্কর আর দারুণ আবেদনপূর্ণ, অর্ণবকে যেন সেই গান ডাকতে লাগলো। অর্ণবের গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেলো। সে আস্তে আস্তে সেদিকে এগোতে লাগলো, ক্যামেরাটাকে সচেতনভাবে তৈরী করে রেখে। গানের আওয়াজটা আস্তে আস্তে স্পষ্ট হতে লাগলো এবং আরও কাছে এগিয়ে আসতে লাগলো।

অর্ণব একটা ঘরের দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। দরজাটা অর্ধেক খোলা ছিলো। টর্চ আর ক্যামেরা ফ্ল্যাশের সাহায্যে সে ভেতরে উঁকি দিতেই—সব শব্দ যেন আচমকা থেমে গেলো।

সাদা শাড়ির মহিলা 

ঘরটা ছিল একটা বিশাল বড় শয়নকক্ষ বা শোওয়ার ঘর । ঘরের ভেতরে ঢুকে ডানদিকে একটা ড্রেসিং টেবিলের সামনে, আয়নার দিকে মুখ করে, এক মহিলা বসে ছিলেন। তিনি পরেছিলেন সাদা রেশমের শাড়ি, চুল এলোমেলোভাবে পড়ে আছে পিঠে। চুল গুলো এমনভাবে এলিয়ে রয়েছে যে তার মুখ আয়নায় দেখা যাচ্ছিলো না।

অর্ণবের নিঃশ্বাস যেন থেমে গিয়েছিলো। সে কোনরকমে চিৎকার করে জিজ্ঞেস করলো, “কে… কে ওখানে?”

মহিলা তার আওয়াজ শুনে ধীরে ধীরে, সেই আয়নার থেকে শরীর না ঘুরিয়েই, শুধু তার মাথা ১৮০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে, মানে গলা পর্যন্ত ঘুরিয়ে -অর্ণবের দিকে তাকালো।

একজন মহিলা, যার মুখটা ছিল অস্বাভাবিক রকমের সুন্দর, কিন্তু মলিন, প্রাণহীন। চোখ দুটো ছিল একদম কালো, যেন দুটি গভীর কুয়া। আর ঠোঁটের কোণে জমাট বেঁধে ছিল রক্ত।

ব্যর্থ পালানোর চেষ্টা 

অর্ণব চিৎকার করতে চাইলো, কিন্তু তার গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বেরোল না। সে পিছিয়ে যেতে চেষ্টা করলো, কিন্তু তার পা যেন মেঝের সঙ্গে আটকে গেল।

আর তখনই সেই মহিলা-আত্মা হাসলো। একটা ভয়ঙ্কর, হাড় হিম করা হাসি। সে উঠে দাঁড়াল—তার পায়ের দিকে তাকাতেই অর্ণবের রক্ত হিম হয়ে গেল—সে মাটি স্পর্শ করছিল না! সে ভেসে ছিল মেঝে থেকে প্রায় এক ফুট ওপরে!

অর্ণব তখন আর কিছু না ভেবে, ছুটে বেরিয়ে পড়ল করিডোর দিয়ে। পিছন থেকে শোনা যাচ্ছিলো সেই হাসি, আর কানের পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছিলো একটা হিম শীতল স্পর্শ। অর্ণব যতো দৌড়াচ্ছিল, করিডোরটা যেন বেড়ে যাচ্ছিলো, কিছুতেই যেন শেষ হচ্ছিলো না। পুরো করিডোরটা যেন এক অসীম শুন্যতায় পরিণত হয়েছিলো। পিছন থেকে ভেসে আসছিল এক আকুতি… “তুমি তো চলে যাচ্ছো, আমি কার কাছে যাবো বলো…”

অর্ণব চোখ বুঁজে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে দৌড়ে যেতে লাগলো। হঠাৎ, সে কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেল এবং পড়ে গেলো। সে ভেবেছিল যে সেটা দরজা, কিন্তু যখন সে চোখ খুলল, সে দেখল যে সে পড়ে আছে সেই শয়নকক্ষের সামনে, যেখান থেকে সে পালিয়ে এসেছিলো।

আত্মার সাথে পরিচয় 

ঘরের দরজাটি সম্পূর্ণরূপে খোলা। ভেতরে, সেই মহিলা-আত্মা দাঁড়িয়ে, হাতে একটা পুরানো দিনের লন্ঠন। আলোয় তার ছায়া পড়ছিল না দেয়ালে।

“তুমি আমাকে খুঁজছিলে?” আত্মাটি অর্ণবকে জিজ্ঞাসা করলো। শব্দটা মৃদু, কিন্তু খুব স্পষ্ট আর সরাসরি যেন মাথার ভেতরে গিয়ে আঘাত করছিলো।

“না… আমি… আমি চলে যাব,” অর্ণব কোনরকম সাহস জুটিয়ে বললো।

“কেউই এখানে থেকে যায়নি,” আত্মাটি বলল, “সবাই চলে যায়। শ্যামবাবুও চলে গিয়েছিল।”

শ্যামবাবুর নাম শুনে অর্ণবের কৌতূহল যেন মৃত্যুভয়কেও ভুলিয়ে দিলো। আর সে সেই আত্মাকে প্রশ্ন করলো - “শ্যামবাবু? এই বাড়ির মালিক?”

“মালিক?” আত্মাটির মুখে একটা তিক্ত হাসি ফুটে উঠল, “হ্যাঁ, সে-ই তো ছিল মালিক। আমার প্রাণেরও মালিক। আমি ছিলাম বিভা, তার প্রথম স্ত্রী।”

অর্ণব বুঝতে পারল, সে শুনতে চলেছে সেই ভূতের গল্প-এর আসল কাহিনী।

বিভা বলতে লাগলো, “শ্যামবাবু আমাকে খুব ভালোবাসতো, অন্তত: আমি তাই ভাবতাম। কিন্তু সে সন্তানের ব্যাপারে ছিলো প্রায় পাগল। কয়েক বছর পর যখন সে জানতে পারলো যে, আমি সন্তান ধারণ করতে পারব না, সে তখন আরেকটি বিয়ে করলো আমায় একা এই বাড়িতে ফেলে রেখে। তার ভালোবাসা ধীরে ধীরে ঘৃণায় পরিণত হলো, সে প্রায় আমার সঙ্গে আর দেখাও করতে আসতো না। আমি একা পড়ে থাকতাম এই বাড়িতে।“

“একদিন কোন এক সাধুবাবা তাকে বলল, একটা নির্দিষ্ট মন্ত্রের সাহায্যে যজ্ঞ করলে তার নতুন স্ত্রী সন্তান লাভ করতে পারবে। কিন্তু সেই যজ্ঞের নিয়মের মধ্যে ছিলো … একজন নারীর রক্ত।”

এইসব শুনতে শুনতে অর্ণবের গলা শুকিয়ে গেল।

“শ্যামবাবু বলির জন্য আমাকেই বেছে নিলো,” বিভার কণ্ঠে ছিলো বেদনা-তিক্ততা-ঘৃণায় ভরা, “সে আমাকে এই ঘরেই, এই ড্রেসিং টেবিলের সামনে, ঘুমের ওষুধ খাইয়ে… আমার গলা কেটে দিয়েছিল। তারপর নিচের বেসমেন্টে আমার রক্ত দিয়ে সেই যজ্ঞ করল।”

“কিন্তু…কিন্তু এসব যজ্ঞ-ফজ্ঞয় কি কোন কাজ হয়?” অর্ণব অনিচ্ছাকৃতভাবেও তার মনের ভেতর থেকে জিজ্ঞেস করে উঠলো।

বিভার কালো চোখ দিয়ে তখন জল গড়িয়ে পড়ছিলো। “নাহ। সেই যজ্ঞে কিছুই হয়নি। শ্যামবাবুর দ্বিতীয় স্ত্রীরও কোন সন্তান হয়নি। অল্পবয়সী মেয়ে, শ্যামবাবু তার উপর অকথ্য অত্যাচার করতো, যেখানে যা শুনতো জড়িবুটি-গাছের ছাল ইত্যাদি খাওয়াতো। শেষে কঠিন অসুখে দু’তিন বছর বাদে সে মারা যায়। কিন্তু তার শ্রাদ্ধ-শান্তি হওয়াতে সে মুক্তি পেয়ে যায়। শ্যামবাবু কিছুদিন পাগল হয়ে যায়, আর এক বছর পরেই সে এই বাড়িতেই আত্মহত্যা করে। তারও শ্রাদ্ধ-শান্তি হওয়ায় সে মুক্তি পেয়ে যায়। কিন্তু আমার আত্মা এখান থেকে মুক্তি পায়নি। আমি—এমন কাউকে খুঁজছি যে, আমার কাহিনী মানুষকে বলবে, যাতে মানুষ শ্যামবাবুর আসল চরিত্রটা জানতে পারবে আর আমায় মুক্তি দেবে।”

“কিন্তু… তুমি কেন তাহলে অন্য লোকদের ভয় দেখাও?”

“কারণ তারা সবাই চোর,” বিভার গলার স্বর আচমকা তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে, “তারা এই বাড়ির জিনিসপত্র চুরি করতে আসে। আমি তাদের শাস্তি দিই। কিন্তু তুমি… তুমি তো শুধু ছবি তুলতে এসেছো।”

অর্ণব এবারে একটু সাহস পেয়ে বললো, “আমি… আমি তোমার কাহিনী বাইরের লোকদের জানাবো।”

বিভা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। তারপর বলল, “হ্যাঁ। তাদের জানিয়ো, তাদের জানিয়ো নীলকুঠির বৌ-য়ের আসল রহস্য। তাদেরকে জানিয়ো শ্যামবাবুর আসল চরিত্র। এবারে তুমি যেতে পারো।”

উদ্ধার ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা

এই কথাগুলো বলে বিভা হাত উঠিয়ে একটা দরজার দিকে নির্দেশ করলো। অর্ণব দেখলো, যে দরজা আগে ছিলো না। অর্ণব দৌড়ে সেই দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যেতে গেলো, কিন্তু সে দরজা পেরিয়ে যেন এক গভীর অন্ধকার কূয়ায় গিয়ে পড়লো আর অচেতন হয়ে পড়লো।

পরের দিন সে নিজেকে স্থানীয় হাসপাতালে আবিষ্কার করলো। সে নাকি বাইরে তার বাইকের কাছে অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলো। স্থানীয় মানুষজন তাকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে।

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে সে ফিরে গেলো সেই বাড়ির কাছে। কাছেই একজন দোকানদার তাকে একটি গ্যারাজে নিয়ে গেলো। যেখানে সে তার গাড়ি, ক্যামেরা সব ফেরত পেলো। স্থানীয় মানুষেরা তাকে ঘিরে বলাবলি করছিলো, কি দেখেছে সে সেই বাড়ির ভেতরে কেন্ই বা সে অচেতন হয়ে পড়েছিলো। তখন অর্ণব তাদের জানালো সব কাহিনী, আর সেই মহিলার শ্রাদ্ধ-শান্তির ব্যবস্থা করতে বললো। সে সেই দোকানদারকে তার নম্বর দিয়ে বললো, সব ব্যবস্থা করে তাকে জানাতে। সে আসবে এবং সমস্ত খরচা-পত্র সেই দেবে।

বাড়ি ফিরে, অর্ণব তার ক্যামেরার মেমোরী কার্ড পরীক্ষা করলো। শেষের দিকের সব ছবি কিভাবে যেন সমস্ত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিলো। শুধু ছিল একটা ছবি – দোতলার সেই বড় শোওয়ার ঘরের, যেখানে আয়নার ভেতরে সাদা শাড়ি পরা এক মহিলার অস্পষ্ট ছবি দেখা যাচ্ছে, যার গলায় একটা গভীর কাটা দাগ।

গল্পের প্রতিক্রিয়া 

এই গল্পটি শুনে আপনার কেমন লাগল? “নীলকুঠির বউ”-র এই হাড় হিম করা ভয়ের গল্প কি আপনাকে রাতের আঁধারে ভাবিয়ে তুললো? বাংলার এই ভূতের কাহিনী আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে কখনো কখনো, মানব ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার বিশ্বাসঘাতকতা থেকেই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ভূতের জন্ম হয়। আপনার বাংলা ভূতের গল্পর তৃষ্ণা মেটানোর জন্যে আমাদের সঙ্গে থাকুন। গল্পর ঝুলি-তে আরও অনেক ভূতের গল্প, ভয়ের গল্প আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ